Join Our Telegram Channel

Join Our Telegram Group

কে বলে বাঙালি ভীরু আর ঘরকুনো ?

সেইদিনটাও ছিল ৬ই এপ্রিল |১৯৬৬ সাল । রেডিওতে এক খবর শুনে চমকে উঠলো সারা বিশ্বের ক্রীড়া মহল। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সংযোগকারী পক প্রণালী সাঁতরে অতিক্রম করেছে এক বাঙালি, তাও মাত্র ২৫ ঘন্টা ৪৪ মিনিটে। শ্রীলঙ্কার ধনুস্কোডি উপকূল থেকে তামিলনাড়ুর তালাইমান্নান অব্দি পাড়ি দেয়া ৫৩ কিলোমিটার চওড়া অগভীর এই সমুদ্র পথ, ডুবোপাহাড় আর বিষাক্ত সামুদ্রিক সাপে ভর্তি।
ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গভর্নর  রবার্ট পকের নামে এই প্রণালীর নামকরণ হয়েছে।
সাঁতারুর নামটা কিন্তু অজানা নয়.....মিহির সেন।

ডাক্তার রমেশ চন্দ্র সেন ও লীলাবতীর সন্তান মিহির সেন পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়া সবটাই কটকে। ভুবনেশ্বর উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন। ব্যারিস্টারি পড়ার ইচ্ছায় বিদেশ যেতে চাইলেো আর্থিক বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। ওড়িশার তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েকের আর্থিক সহায়তায় ১৯৫০ সালে বিলেতগামী জাহাজে রওনা দেন তিনি অল্প কিছু টাকা ও তৃতীয় শ্রেনীর টিকিট সম্বল করে।

লন্ডনে গিয়ে তিনি রেলওয়ে স্টেশনে নৈশ কুলীর কাজ করতে থাকেন। ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্ডিয়া হাউসে যোগাযোগ হওয়ার পর লিংকনস ইন' এ তার ব্যারিস্টারী পড়া শুরু হয়। সারাদিন ইন্ডিয়া হাউসে কাজ কর‍তেন ও রাত্রে পড়াশোনা করতেন তিনি। স্থানীয় একটি পত্রিকায় আমেরিকান সাঁতারু ফ্লোরেন্স চ্যাডউইকের সাক্ষাৎকার পড়ার পর তিনি ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে পার করার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। যদিও তার এর আগে দীর্ঘ সাঁতারের অভিজ্ঞতা ছিলনা। কিছুদিন প্রশিক্ষনের পর তিনি ফ্রি স্টাইল সাঁতারে দক্ষ হয়ে ওঠেন।  প্রথমবার অসফল হলেও ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৫২ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। 

এখানেই থেমে থাকেননি মিহির, পক প্রণালী জয়ের পর আট ঘন্টায় জিব্রাল্টার, চোদ্দো ঘন্টায় দার্দেনেলিস এবং চার ঘন্টায় বসফরাস প্রণালী পেরিয়ে বিশ্বের দ্রুততম সাঁতারুর খেতাব অর্জন করেন। সবশেষে প্রথম অশ্বেতাঙ্গ এবং বিশ্বে তৃতীয় সাঁতারু হিসেবে পানামা খাল পেরিয়ে যান।

কে বলে বাঙালি ভীরু আর ঘরকুনো ?

       

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.